লেখক কে জানিনা
কিন্তু যে লিখেছো আসাধারণ লিখেছো... লেখাটা পড়ে চোখের জল ধরে রাখতে পারিনি...
★★★ সবুজ বাতি ★★★
বছর দুয়েক আগের কথা,,।
ব্যাচেলর লাইফ,,ছোটো খাটো একটা প্রাইভেট কোম্পানিতে চাকরী,,
মা বাবা আর ছোটো বোনকে নিয়ে ছোটো সুখের সংসার,।
বাবা একটা জুটমিলে রিটায়ার করে প্রবিডেন্ট ফান্ডের সামান্য টাকায়
দুকামরার একটা বারিও করেছে,,সামান্য কিছু দেনাও হয়েছে,,।
ভবিষ্যৎএর স্বপ্ন দেখছি আমার গার্লফ্রেন্ড প্রীয়াকে নিয়ে,,। আমাকে খুবই ভালবাসে প্রীয়া। আমরা ঠিক করেছি,, বাবার দেনাটা শোধ করেই বিয়েটা সেরে নেবো,,। রাতে আমাদের কথাও হয় ফেসবুকে,,। কম খরচে অনেক কথা,, মন চাইলে সারারাত,,। আমার ফ্রেন্ডলিষ্টে প্রায় কম বেশি করে একশো সদশ্য। সকলের সাথে না হলেও অনেকেরই সাথে নিওমিত কথা হয়,,। এমনি অল্প কথা বলা একজন ছিলো,, বিথী শর্মা,,। অবাঙালী হলেও পরিস্কার বাংলা বলতে পারতো,,। আমি পাঁচটা sms করলে একটার উত্তর দিত,,। কখনো সুধুই লাইক দিয়ে ছেরে দিত,,।
প্রফাইলের ছবিটাও খুব সুন্দর,, এককথায় সুন্দরী বলা চলে,, বড় বড় চোখ মুখে মৃদু হাঁসি সত্তিই সুন্দর,,।
কোম্পানিতে লেবারদের দাবিদাবা আর ইউনিয়ান বাজিতে বন্ধই হয়ে গেল কোম্পানি,,। একেবারেই কর্মহীন হয়েগেলাম,,। ভাবলাম একটা কাজ ঠিকি জুটিয়ে নেব,,। এমন ভাবনা আমার মিথ্যে হয়ে গেল,,। এইভাবে কএক মাস কেটে গেল,,একে একে মায়ের গয়না দোকানে বাঁধা পড়লো,,।
সংসার বাঁচাতে রাজমিস্ত্রির জোগারের কাজের জন্য কথা বললাম,,সেখানেও নিলোনা,, কারন কাজের কোনো অভিজ্ঞতাই নেই,,। সাফ জানিয়ে দিল তোমার দ্বারায় একাজ হবেনা,,।
অবস্থা বুঝে মুদিওয়ালাও ধার দেওয়া বন্ধ করে দিল।
ছোটো বোনটা ক্লাস টেনে পড়ে,,। সেও দেখি খিদে নেই বলে, কিছু না খেয়েই স্কুলে চলে গেল,,।
মা বাবার মুখের দিকে তাকাতেই পারছিনা,,।
গত রাতে প্রীয়াও বলে দিল,,অন্য জায়গায় নাকি বিয়ের ঠিক হয়ে গেছে,,। আর যেন কখনোই ডিস্টার্ব না করে,,। যাকে এখন সবচেয়ে বেশি প্রয়জন,, সবার আগে সেই পালিয়ে গেল,,।
বন্ধুরাও প্রায় সবাই বেকার,,।কিন্তু ওদের কেউ না কেউ আছে সংসার চালানোর মত,,। তবুও ওরা অনেক সাহায্য করেছে,,।
অভাব যে এত ভয়ঙ্কর তা আগে যানাছিলনা,,।
মায়ের মুখঝামটা,, বাবার শুকনো মুখের কটাক্ষ দৃষ্টি,,যে বোনটার সারাটা দিন টুকটাক করে মুখ চলতো - সে আজ খালি পেটে বইয়ে মুখ গূঁজে পরে রয়েছে,,।
আর পারছিনা,, এভাবে বাঁচার কনো মানেই হয়না,,। আজেবাজে উল্টোপাল্টা চিন্তা মাথার মধ্যে ঘুরপাক খাচ্ছে,,। অনেক রাতে বারি ফিরেছিলাম,,বন্ধুর খাওয়ানো চা বিস্কুট অনেক আগেই হজম হয়ে গেছে,,। এবার বিষ খেতে ইচ্ছা করছে,,, হাঁ এটাই একমাত্র পথ,, অসহ্য যন্ত্রণার হাত থেকে মুক্তির উপায় এটাই,,। হাঁ সুইসাইড,, মাথার মধ্যে ফিক্সড হয়ে গেল,, এছাড়া আর কিছুই মাথায় আসছেনা,,।
পকেট থেকে মোবাইলটা বের করে ফেসবুক খুললাম,,ফ্রেন্ড লিষ্টের বন্ধুরা যারা অন লাইন ছিলো,, তাদের মধ্যে প্রীয়া ছিলো এক নাম্বারে,,তাই ওকেই প্রথমে লিখলাম গূড বাই প্রীয়া, চললাম,,,,,
হুঁহঃ,,,,,নো রিপ্লাই,,হয়তো ব্যাস্ত আছে অন্য কারোর সাথে,,,।
তারপর পরপর প্রত্যেককেই একই কথা লিখে ফরোয়ার্ড করলাম,,"গুড বাই বন্ধু চললাম ",,,।তার মধ্যে অনেকে অনেক রকম রিপ্লাই করলো,, কেউ - ভাল থাকিস,,,। কেউ - কোথাও বেড়াতে যাচ্ছো নাকি,,? কেউ - কনো কাজের জন্যে দেশ ছাড়ছো নাকি,,?
কিন্তু একমাত্র বিথীই ব্যাপারটা ঠিকি আন্দাজ করেছিলো,,। যে কিনা অনেক কথা বলার পর তবে একটা রিপ্লাই দেয়,,। সে পরস্পর প্রশ্ন বাণে আমাকে ঘায়েল করে ফেলল,,।
একের পর এক প্রশ্ন - এই তুমি কোথায় যাচ্ছো,,?
তোমার গুড বাই বলার ধরনটা একটু অন্য রকম,,।
জীবন থেকে পালিয়ে যাচ্ছোনা তো,,?
কি হয়েছে তোমার,,?
প্রেমীকা ধোকা দিয়েছে,,?
সুইসাইড করার কথা ভাবছোনা তো,,?
আমি আশ্চর্য হয়ে গেলাম, আগে যেটুকু কথা হয়েছে,, -হায়,,হ্যালো,, Sudhu Tor Jonno কেমন আছো,, ভালো আছি ব্যাস এইটুকুই,,। এর পরের কথার কখনই উত্তর পাইনি,,আর আজ,,! সাত পাঁচ ভাবতে ভাবতে কখন যে হুঁ লিখে সেন্ড করে ফেলেছি,,,,,
আবার শুরু হয়ে গেল,,-
এ মা তুমি কি বোকা,,।
এই সামান্য কারনে কেউ সুইসাইড করে নাকি,,?
বছরের ঋতু পরিবর্তনের মতই প্রেমীক প্রেমীকারা আসে আর যায়,, ছাড়ো ওসব কথা,, তুমি চাইলে আমাকে ভালোবাসতে পারো,। আমাকে দেখতেও খুব খারাপ নয়,,। কথা দিচ্ছি মৃত্যুর আগে পর্যন্ত বেইমানি করবোনা,,।
এবার আমি একটু ঝেরে কাশলাম,,। সংক্ষেপে আমার সব সমস্যা গুলো বললাম,,।
সব শুনে যে কথা গুলো বলল, -
তুমি একজন বীর যোদ্ধা,, তোমার লড়াইয়ের উপরে আরো তিন তিনটি প্রাণীর বাঁচা মরা নির্ভর করছে,,। তুমি নিশ্চিত যানবে,, তোমার জীবনে যখন ঘনো অন্ধকার,, ঠিক তার পরেই ভগবান তোমার জন্য একটি সুন্দর সকাল রচনা করে রেখেছেন,,।
আরে বোকা ভগবান এভাবেই পরিক্ষা নেন,, তোমাকে যে উত্তির্ন হতেই হবে,,।
কথা শেষ হতেই বিথীর একটা সেলফি ভেসে উঠলো মবাইলের স্ক্রিনে,,। আমাকে ছুঁয়ে কথা দাও এ লড়াইটা তুমি লড়বে,,। আমার ভালবাসার দিব্বি, এ লড়াই তোমাকে জিততেই হবে,,।
বিছানার উপর মোবাইলটা রাখা,,পর পর লেখাগুলো ফুটে উঠছে,,মনে মনে লেখাগুলো আউরে যাচ্ছি,,। কি উত্তর দেব কিছু ভেবে পাচ্ছিনা,,। হাতের আঙুল গুল যেন অসার হয়ে গেছে,,
আবার - কিহল কিছু তো বল,,।
অনেক কষ্টে টাইপ করলাম,, আমি তোমার সঙ্গে দেখা করতে চাই,,
বিথী - হাঁ নিশ্চই,, বল কবে কোথায় দেখা করতে চাও,,?
বললাম - কাল বিকেল পাঁচটায় বাবুঘাটে নদীর ধারের পার্কে,,।
বিথী - তুমি ঠিক আসবে তো,,? তোমার নংটা দাও যদি তোমার আসতে দেরি হয়,,। আমি কিন্তু অপেক্ষা করবো,,।
বললাম - হাঁ ঠিক আসবো,, সঙ্গে ফোননং টাও টাইপ করে দিলাম,,।
বিথী - তাহলে এখন ভালছেলের মত ফোন রেখে ঘুমিয়ে পরো,,কাল তাহলে আমাদের দেখা হচ্ছে,,।
Good night Sweet dreams..বলে অফলাইন হয়েগেল,,। আমিও ফোন বন্ধ করলাম,,।
ভাবতে লাগলাম,, কে এই বিথী,,?
তা সে যেই হোক,, ওর কয়েকটা কথায় জীবনের সিদ্ধান্তটাই পাল্টে গেল,,।
থেমে যাওয়া গাড়ি যেন নতুন করে আবার গতি ফিরে পেলো,,।
আর প্রীয়া সেও তো একটা মেয়ে,, কত তফাৎ দুজনের মধ্যে,,। কখন যেন ঘুমিয়ে পড়লাম,,।
সকালে দরজা ধাক্কায় ঘুমটা ভেঙে গেল,,খুলে দেখি আমার এক বন্ধু সুব্রত,,। বলল আমার দাদা আমার জন্য একটা কাজ দেখেছে,, কিন্তু আমি চাই কাজটা তুই কর,, এই মুহুর্তে কাজটা তোর খুবই দরকার,,
কলকাতায় এক চায়ের গোডাউনে লেবার দেখাশুনার কাজ,,মাইনে সাত হাজার দেবে,, এক তারিখে জয়েন্ট,, পাঁচ দিন বাকি,,।
বললাম - কি বলে যে ধন্যবাদ দেবো,,।
সুব্রত - ওসব পরে হবে,, আমি দাদাকে ব্যাবস্থা করতে বলছি,,। চলে গেল সুব্রত,,।
বিথীর কথা যে এত তারাতারি ফলে যাবে তা স্বপ্নেও ভাবিনি,,। আজ বিকেলে বিথীর সাথে দেখা করতেই হবে,,।
যথারীতি পাঁচটার আগেই যথাস্থানে পৌঁছে গেলাম,,চোখ পরেগেল বিথী আমারো আগে পৌঁছে আমার জন্য অপেক্ষা করছে,,। তাকিয়ে আছে আমারই দিকে,,।যেন প্রয়জনটা ওরই,,।
একটা হালকা হাঁসি দিয়ে বলল - এইতো ঠিক সময়ের মধ্যেই এসেগেছে আমার যোদ্ধা,, ঠিক এইভাবেই সময়ের মূল্য দিও,,।
ওর কথায় বুকটা ভরেগেল,,। ওর চোখের দৃষ্টি এতোটাই তিক্ষ্ণ যে, আমার চোখের দরজা দিয়ে ঢুকে মনের ভেতরটাও দেখতে পাচ্ছে,,।
দুজনেই একটা বেঞ্চে গিয়ে বসলাম নদীর দিকে মুখ করে,,। সুর্য্য ডুবছে,, লাল আবিরের রঙে আকাশটা রাঙিয়ে দিয়েছে,,। আগে কখনো এভাবে আকাশকে দেখিনি,,।
হঠাৎই বিথী বলে উঠলো,, ও যোদ্ধা বলো কি যেন বলবে বলে ডেকেছিলে,,।
বললাম - আমার মনেহয়,, যেটা বলতে চাই তা আর বলার অপেক্ষা রাখেনা,, তুমি আগে থেকেই সব যেনে গেছো,,।
বিথী - হাঁ যানি,,
বললাম - কি যানো,,?
বিথী - এইযে সামনেই ফুচকাওয়ালা,, ঝালমুড়ি ওয়ালারা দোকান দিয়েছে,,। তোমার খুব ইচ্ছে করছে আমাকে মন ভরে খাওয়াতে,,। কিন্তু তোমার পকেট একেবারে গড়েরমাঠ,, খাওয়াতে পারছোনা তাই মনে মনে কষ্ট পাচ্ছ,,।
আমি এক লাফে উঠে ডাঁড়িয়ে পরলাম,,আর মুখের দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছি - আর ভাবছি,, আরে সত্তি সত্তিই তো আমি এটাই ভাবছিলাম,,।
কৌতুহল আর চাপতে পারালাম না,, বলেই ফেললাম,, এই তুমি কে বলতো,,?
খুব সহজ ভাবেই উত্তর দিল - তোমার প্রেমীকা,,।
হাতটা ধরে এক ঝটকায় আবার পাসে বসিয়ে দিল,,।
আর বলল - যা বলি মন দিয়ে শোনো,,
প্রশ্ন করলো - যানো আমাদের প্রেমের মেয়াদ কতদিনের,,?
আমি - না যানিনা,,
বিথী - মাত্র এক দিনের,,।
তুমি কি যানো আমার প্রেমীকের সংখা কত,,?
আমি - না যানিনা,,
বিথী - তোমাকে নিয়ে 210 জন,,
তুমি কি যানো,, কেন আমি এক দিনের বেশি সম্পর্ক রাখিনা,,?
আমি - না,,
বিথী - কারন, একটা যোদ্ধা তৈরী করতে আমার কাছে এক দিনই যথেষ্ট,,। এবার বল আমার বীর যোদ্ধা,, তুমি কি যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত,,?
কথাগুলো শুনে আমার যেন দম আটকে গিয়েছিলো,, যেন অন্য কনো জগৎএ বিচরণ করছিলাম,,।আমার কাঁধ দুটো ধরে ঝাঁকিয়ে দিয়ে বলল,,- শুনছো আমার কথা ? তুমি কি প্রস্তুত,,?
আমি - হাঁ আমি অনেক আগেই প্রস্তুত,,।
দুহাতে আমার গাল দুটো ধরে বলল চোখ বন্ধকরো,, করলাম - ঠোঁটে চুম্বনের পরশ পেলাম,,।
সারা শরির মনে এক ঐশ্বরিক অনুভুতির স্বাদ পেলাম,, সেটা ভাষায় বর্ণনা করতে পারবোনা,,।
তখন সন্ধ্যা হয়ে এসেছে,,। বিথী আমার দিকে দুহাত বারিয়ে বলল,, - তুমি চাইলে আমাকে আলিঙ্গন দিতে পারো,,। আমি আশে পাশে দেখলাম,, অনেক মানুষের ভীড়,।
বিথী - আমি কাউকে তোয়াক্কা করিনা,,
আমি মাথা নেরে না বলে দিলাম,,।
এবার আরো কাছে ঘেঁসে বসলো,, শরিরের আধখানা অংশ আমাকে ছুঁয়ে আছে,,। শান্ত গলায় -
আবার প্রশ্ন - যানো যোদ্ধা আমার আয়ু আর কত দিন,,?
এবার আমি ভালকরে মুখের দিকে তাকালাম,,
নিয়ন আলোয় চোখের কোনে জল চিকচিক করছে,, আর মাত্র 119 দিন,, আমি ক্যান্সারে আক্রান্ত,,। যোদ্ধা আমি মরতে চাই না,, আমি বাঁচতে চাই,,
আমার দিন একটা একটা ফুরিয়ে আসছে,,
আমার ভেতরটা আমার অজান্তেই কেঁদে উঠলো,, চোখের জলকে আর আটকে রাখতে পারালাম না,,।
বিথী - কি হল যোদ্ধা,,? তোমার চোখে জল,,? তুমি না আমার বীর যোদ্ধা,, আর বীরের চোখে জল শোভা পায়না,,।
আমি বললাম - নিজের জন্য নয়,, তোমার কথা ভেবেই কাঁদছি,, তোমার যে মহৎ উদ্দেশ্য, তার কথা ভেবে কাঁদছি,, এখন আমি বুঝতে পারছি তোমার এই একদিনের ভালবাসায় একটা মানুষ একশো বছর পর্যন্ত বাঁচার শক্তি ফিরে পাবে,,। তোমার অবর্ত্তমানে যারা তোমার এই ভালবাসা থেকে বঞ্চিত হবে,, তাদের কথা ভেবে কাঁদছি,,।
এবার বিথীও কেঁদে ফেলল,,
বলল - বাহঃ আমার যোদ্ধা এবার পুরো পুরি তৈরী,, যোদ্ধা কয়েকটা জরুরী কথা,,- আমি আর কোনোদিন তোমার সঙ্গে দেখা করবোনা,,প্রয়জনে আমি তোমাকে ডেকে নেব,,।
ফেসবুকে আমার উপস্থিতি দেখেও কখনো sms করবেনা,,
আমার নামের পাশে ঐ সবুজ বাতিটা যতদিন দেখতে পাবে,,যানবে ততদিন আমিও আছি,,
তোমার সাথেই আছি,,
কখনো যদি আমার জন্য মনটা কেঁদে ওঠে,, এই সময়,, এইখানে,, এইই বেঞ্চে এসে বসো,,। আর আবিরে রাঙানো ডুবে যাওয়া ঐ সুর্য্যটাকে দেখো,,।
একটা দির্ঘশ্বাস ছেরে বলল,,যোদ্ধা এবার আমাকে উঠতে হবে,,আমার অনেক কাজ আর হাতে সময় খুবই কম, তুমি অনুমতি দাও,,,,,,,,
আমি বললাম - তোমায় বেঁধে রাখার কনো ক্ষমতাই আমার নেই,,। তুমি যাও আবার নতুন কনো যোদ্ধার খোঁজে,,।
আমার কাঁধটা আলতোভাবে ঝাঁকিয়ে চলেগেল,,।
বিথী হারিয়ে গেল মানুষের ভীড়ে,,
আমি বিথীতে মহিত হয়ে গেলাম,, আমি যেন আর আমার মধ্যে নেই,,সম্পুর্ন এক অন্য মানুষ,,।
পরেরদিন সকালে একটা ম্যাসেজ পেলাম - কোলকাতার এক অনামী পাখা কারখানায় প্রডাকশন ম্যানেজারের পদের চাকরীর জন্য,,
আর, চাকরীটা পেতে কনো অসুবিধে হয়নি,,।
ছোট্ট কারখানা,, মালিকের অবর্ত্তমানে আমাকেই সব কিছু দেখতে হয়,,। জীবনটা আগের মতই আবার স্বাভাবিক হয়ে গেল,,।
রোজ রাতে ফেসবুক খুলে বিথীর উপস্থিতি লক্ষ করি,,জ্বলজ্বল করছে সবুজ আলোটা,, বিথী এখনো অনলাইন আছে,,। অনেক ম্যাসেজ আসে,, কনো ম্যাসেজই আর পরতে ইচ্ছা করেনা,, অনেক ম্যাসেজের ভীড়ে প্রীয়ারও ম্যাসেজ আসে,,আর দেখিনা,,সুধু সবুজ আলো ছাড়া,,।
যানি এটাও একদিন হঠাৎই নিভে যাবে,, আর জ্বলবেনা,,।
এমনি একদিন তাকিয়ে আছি সবুজ আলোটার দিকে,,হঠাৎই ম্যাসেজ এলো বিথী শর্মার প্রোফাইল থেকে,, বুকটা ছ্যাঁত করে ঊঠলো,, তাতে লেখা,,,-
যোদ্ধা,, যদি শেষ দেখাটা দেখতে চাও, তারাতারি চলে এসো,, সময় খুবই কম,,।
নিচে পাটনা'র একটা ঠিকানা দেওয়া,,।
তখন অনেক রাত - ভোর হতেই বেরিয়ে পরলাম একরাশ উৎকন্ঠা নিয়ে,,।
ঠিকানায় পৌঁছতে কনো অসুবিধে হয়নি,,।
কলকাতায় বড়বাজারে মামার কাছে থাকতো,, এটা নিজের বারি,, অনেক পুরানো আমলের বারি,, চারিদিক ঘেরা,, মাঝে বিশাল বড় দালান,, বাইরে ভিতরে প্রচুর মানুষের ভীর,, সবার চোখেই জল,,
কোথায় বিথী,, মনটা উৎকন্ঠায় ছটফট করছে,,
ভীড় ঠেলে ভিতরের দিকে যাচ্ছি,, হঠাৎ কেউ আমার হাতটা ধরে ফেললো,, দেখি জল ভরা চোখে আমার মালিক,,
ভীড় কাটিয়ে আমাকে নিয়ে গেল বিথীর কাছে,,
দালানের একপ্রান্তে পালঙ্কের উপরে রানীর মত সুয়ে আছে বিথী,, বড় বড় চোখের কোনে কালি,, শুকনো মুখ,,বিছানার সঙ্গে প্রায় মিশেই গেছে,,
কিন্তু ঠোঁটের কোনে সেই অম্লান হাঁসি এখনো বর্ত্তমান,,
বিথী বলল - আমার পাসে বসো,,
আমি বসলাম,, আমার হাতটা নিয়ে একটা চুমু দিয়ে বলল,, যানো যোদ্ধা আমি তোমায় রোজ দেখতাম তুমি তাকিয়ে আছো আমার প্রফাইলের ঐ সবুজ বাতিটার দিকে,, আজ থেকে ওটা আর জ্বলবেনা,,
আমি কথা দিয়েছিলাম বেইমানী করবোনা,,, দেখো -
আমার শেষ দিনেও তোমাকে আমার ভালবাসা দিতে পেরেছি,, আমি আবার আসবো তোমাদের মাঝে,, আবার আমি যোদ্ধা রুপে তোমাদের পাসে পাবো,,।
আর এইযে এখানে এতো মানুষ দেখছো,, এদের মধ্যে অনেকেই তোমার মত বীর যোদ্ধা,,
আজ আমার একটুও কান্না পেলনা,, কারন -
বিথী কথা দিয়েছে আবার আসবে,,
বিথী বলল এবার তুমি যাও,,আর এক যোদ্ধা এসেছে শেষ দেখা করতে,,
আমি আর পেছন ফিরে তাকাইনি,, আমি চলে যাওয়া সইতে পারিনা,,।
এখনো আমি প্রতি রাতে একবার করে দেখি -
বিথীর প্রোফাইলটা
যদি একবার জ্বলে ওঠে সবুজ বাতিটা,,,,,,,,,"
কিন্তু যে লিখেছো আসাধারণ লিখেছো... লেখাটা পড়ে চোখের জল ধরে রাখতে পারিনি...
★★★ সবুজ বাতি ★★★
বছর দুয়েক আগের কথা,,।
ব্যাচেলর লাইফ,,ছোটো খাটো একটা প্রাইভেট কোম্পানিতে চাকরী,,
মা বাবা আর ছোটো বোনকে নিয়ে ছোটো সুখের সংসার,।
বাবা একটা জুটমিলে রিটায়ার করে প্রবিডেন্ট ফান্ডের সামান্য টাকায়
দুকামরার একটা বারিও করেছে,,সামান্য কিছু দেনাও হয়েছে,,।
ভবিষ্যৎএর স্বপ্ন দেখছি আমার গার্লফ্রেন্ড প্রীয়াকে নিয়ে,,। আমাকে খুবই ভালবাসে প্রীয়া। আমরা ঠিক করেছি,, বাবার দেনাটা শোধ করেই বিয়েটা সেরে নেবো,,। রাতে আমাদের কথাও হয় ফেসবুকে,,। কম খরচে অনেক কথা,, মন চাইলে সারারাত,,। আমার ফ্রেন্ডলিষ্টে প্রায় কম বেশি করে একশো সদশ্য। সকলের সাথে না হলেও অনেকেরই সাথে নিওমিত কথা হয়,,। এমনি অল্প কথা বলা একজন ছিলো,, বিথী শর্মা,,। অবাঙালী হলেও পরিস্কার বাংলা বলতে পারতো,,। আমি পাঁচটা sms করলে একটার উত্তর দিত,,। কখনো সুধুই লাইক দিয়ে ছেরে দিত,,।
প্রফাইলের ছবিটাও খুব সুন্দর,, এককথায় সুন্দরী বলা চলে,, বড় বড় চোখ মুখে মৃদু হাঁসি সত্তিই সুন্দর,,।
কোম্পানিতে লেবারদের দাবিদাবা আর ইউনিয়ান বাজিতে বন্ধই হয়ে গেল কোম্পানি,,। একেবারেই কর্মহীন হয়েগেলাম,,। ভাবলাম একটা কাজ ঠিকি জুটিয়ে নেব,,। এমন ভাবনা আমার মিথ্যে হয়ে গেল,,। এইভাবে কএক মাস কেটে গেল,,একে একে মায়ের গয়না দোকানে বাঁধা পড়লো,,।
সংসার বাঁচাতে রাজমিস্ত্রির জোগারের কাজের জন্য কথা বললাম,,সেখানেও নিলোনা,, কারন কাজের কোনো অভিজ্ঞতাই নেই,,। সাফ জানিয়ে দিল তোমার দ্বারায় একাজ হবেনা,,।
অবস্থা বুঝে মুদিওয়ালাও ধার দেওয়া বন্ধ করে দিল।
ছোটো বোনটা ক্লাস টেনে পড়ে,,। সেও দেখি খিদে নেই বলে, কিছু না খেয়েই স্কুলে চলে গেল,,।
মা বাবার মুখের দিকে তাকাতেই পারছিনা,,।
গত রাতে প্রীয়াও বলে দিল,,অন্য জায়গায় নাকি বিয়ের ঠিক হয়ে গেছে,,। আর যেন কখনোই ডিস্টার্ব না করে,,। যাকে এখন সবচেয়ে বেশি প্রয়জন,, সবার আগে সেই পালিয়ে গেল,,।
বন্ধুরাও প্রায় সবাই বেকার,,।কিন্তু ওদের কেউ না কেউ আছে সংসার চালানোর মত,,। তবুও ওরা অনেক সাহায্য করেছে,,।
অভাব যে এত ভয়ঙ্কর তা আগে যানাছিলনা,,।
মায়ের মুখঝামটা,, বাবার শুকনো মুখের কটাক্ষ দৃষ্টি,,যে বোনটার সারাটা দিন টুকটাক করে মুখ চলতো - সে আজ খালি পেটে বইয়ে মুখ গূঁজে পরে রয়েছে,,।
আর পারছিনা,, এভাবে বাঁচার কনো মানেই হয়না,,। আজেবাজে উল্টোপাল্টা চিন্তা মাথার মধ্যে ঘুরপাক খাচ্ছে,,। অনেক রাতে বারি ফিরেছিলাম,,বন্ধুর খাওয়ানো চা বিস্কুট অনেক আগেই হজম হয়ে গেছে,,। এবার বিষ খেতে ইচ্ছা করছে,,, হাঁ এটাই একমাত্র পথ,, অসহ্য যন্ত্রণার হাত থেকে মুক্তির উপায় এটাই,,। হাঁ সুইসাইড,, মাথার মধ্যে ফিক্সড হয়ে গেল,, এছাড়া আর কিছুই মাথায় আসছেনা,,।
পকেট থেকে মোবাইলটা বের করে ফেসবুক খুললাম,,ফ্রেন্ড লিষ্টের বন্ধুরা যারা অন লাইন ছিলো,, তাদের মধ্যে প্রীয়া ছিলো এক নাম্বারে,,তাই ওকেই প্রথমে লিখলাম গূড বাই প্রীয়া, চললাম,,,,,
হুঁহঃ,,,,,নো রিপ্লাই,,হয়তো ব্যাস্ত আছে অন্য কারোর সাথে,,,।
তারপর পরপর প্রত্যেককেই একই কথা লিখে ফরোয়ার্ড করলাম,,"গুড বাই বন্ধু চললাম ",,,।তার মধ্যে অনেকে অনেক রকম রিপ্লাই করলো,, কেউ - ভাল থাকিস,,,। কেউ - কোথাও বেড়াতে যাচ্ছো নাকি,,? কেউ - কনো কাজের জন্যে দেশ ছাড়ছো নাকি,,?
কিন্তু একমাত্র বিথীই ব্যাপারটা ঠিকি আন্দাজ করেছিলো,,। যে কিনা অনেক কথা বলার পর তবে একটা রিপ্লাই দেয়,,। সে পরস্পর প্রশ্ন বাণে আমাকে ঘায়েল করে ফেলল,,।
একের পর এক প্রশ্ন - এই তুমি কোথায় যাচ্ছো,,?
তোমার গুড বাই বলার ধরনটা একটু অন্য রকম,,।
জীবন থেকে পালিয়ে যাচ্ছোনা তো,,?
কি হয়েছে তোমার,,?
প্রেমীকা ধোকা দিয়েছে,,?
সুইসাইড করার কথা ভাবছোনা তো,,?
আমি আশ্চর্য হয়ে গেলাম, আগে যেটুকু কথা হয়েছে,, -হায়,,হ্যালো,, Sudhu Tor Jonno কেমন আছো,, ভালো আছি ব্যাস এইটুকুই,,। এর পরের কথার কখনই উত্তর পাইনি,,আর আজ,,! সাত পাঁচ ভাবতে ভাবতে কখন যে হুঁ লিখে সেন্ড করে ফেলেছি,,,,,
আবার শুরু হয়ে গেল,,-
এ মা তুমি কি বোকা,,।
এই সামান্য কারনে কেউ সুইসাইড করে নাকি,,?
বছরের ঋতু পরিবর্তনের মতই প্রেমীক প্রেমীকারা আসে আর যায়,, ছাড়ো ওসব কথা,, তুমি চাইলে আমাকে ভালোবাসতে পারো,। আমাকে দেখতেও খুব খারাপ নয়,,। কথা দিচ্ছি মৃত্যুর আগে পর্যন্ত বেইমানি করবোনা,,।
এবার আমি একটু ঝেরে কাশলাম,,। সংক্ষেপে আমার সব সমস্যা গুলো বললাম,,।
সব শুনে যে কথা গুলো বলল, -
তুমি একজন বীর যোদ্ধা,, তোমার লড়াইয়ের উপরে আরো তিন তিনটি প্রাণীর বাঁচা মরা নির্ভর করছে,,। তুমি নিশ্চিত যানবে,, তোমার জীবনে যখন ঘনো অন্ধকার,, ঠিক তার পরেই ভগবান তোমার জন্য একটি সুন্দর সকাল রচনা করে রেখেছেন,,।
আরে বোকা ভগবান এভাবেই পরিক্ষা নেন,, তোমাকে যে উত্তির্ন হতেই হবে,,।
কথা শেষ হতেই বিথীর একটা সেলফি ভেসে উঠলো মবাইলের স্ক্রিনে,,। আমাকে ছুঁয়ে কথা দাও এ লড়াইটা তুমি লড়বে,,। আমার ভালবাসার দিব্বি, এ লড়াই তোমাকে জিততেই হবে,,।
বিছানার উপর মোবাইলটা রাখা,,পর পর লেখাগুলো ফুটে উঠছে,,মনে মনে লেখাগুলো আউরে যাচ্ছি,,। কি উত্তর দেব কিছু ভেবে পাচ্ছিনা,,। হাতের আঙুল গুল যেন অসার হয়ে গেছে,,
আবার - কিহল কিছু তো বল,,।
অনেক কষ্টে টাইপ করলাম,, আমি তোমার সঙ্গে দেখা করতে চাই,,
বিথী - হাঁ নিশ্চই,, বল কবে কোথায় দেখা করতে চাও,,?
বললাম - কাল বিকেল পাঁচটায় বাবুঘাটে নদীর ধারের পার্কে,,।
বিথী - তুমি ঠিক আসবে তো,,? তোমার নংটা দাও যদি তোমার আসতে দেরি হয়,,। আমি কিন্তু অপেক্ষা করবো,,।
বললাম - হাঁ ঠিক আসবো,, সঙ্গে ফোননং টাও টাইপ করে দিলাম,,।
বিথী - তাহলে এখন ভালছেলের মত ফোন রেখে ঘুমিয়ে পরো,,কাল তাহলে আমাদের দেখা হচ্ছে,,।
Good night Sweet dreams..বলে অফলাইন হয়েগেল,,। আমিও ফোন বন্ধ করলাম,,।
ভাবতে লাগলাম,, কে এই বিথী,,?
তা সে যেই হোক,, ওর কয়েকটা কথায় জীবনের সিদ্ধান্তটাই পাল্টে গেল,,।
থেমে যাওয়া গাড়ি যেন নতুন করে আবার গতি ফিরে পেলো,,।
আর প্রীয়া সেও তো একটা মেয়ে,, কত তফাৎ দুজনের মধ্যে,,। কখন যেন ঘুমিয়ে পড়লাম,,।
সকালে দরজা ধাক্কায় ঘুমটা ভেঙে গেল,,খুলে দেখি আমার এক বন্ধু সুব্রত,,। বলল আমার দাদা আমার জন্য একটা কাজ দেখেছে,, কিন্তু আমি চাই কাজটা তুই কর,, এই মুহুর্তে কাজটা তোর খুবই দরকার,,
কলকাতায় এক চায়ের গোডাউনে লেবার দেখাশুনার কাজ,,মাইনে সাত হাজার দেবে,, এক তারিখে জয়েন্ট,, পাঁচ দিন বাকি,,।
বললাম - কি বলে যে ধন্যবাদ দেবো,,।
সুব্রত - ওসব পরে হবে,, আমি দাদাকে ব্যাবস্থা করতে বলছি,,। চলে গেল সুব্রত,,।
বিথীর কথা যে এত তারাতারি ফলে যাবে তা স্বপ্নেও ভাবিনি,,। আজ বিকেলে বিথীর সাথে দেখা করতেই হবে,,।
যথারীতি পাঁচটার আগেই যথাস্থানে পৌঁছে গেলাম,,চোখ পরেগেল বিথী আমারো আগে পৌঁছে আমার জন্য অপেক্ষা করছে,,। তাকিয়ে আছে আমারই দিকে,,।যেন প্রয়জনটা ওরই,,।
একটা হালকা হাঁসি দিয়ে বলল - এইতো ঠিক সময়ের মধ্যেই এসেগেছে আমার যোদ্ধা,, ঠিক এইভাবেই সময়ের মূল্য দিও,,।
ওর কথায় বুকটা ভরেগেল,,। ওর চোখের দৃষ্টি এতোটাই তিক্ষ্ণ যে, আমার চোখের দরজা দিয়ে ঢুকে মনের ভেতরটাও দেখতে পাচ্ছে,,।
দুজনেই একটা বেঞ্চে গিয়ে বসলাম নদীর দিকে মুখ করে,,। সুর্য্য ডুবছে,, লাল আবিরের রঙে আকাশটা রাঙিয়ে দিয়েছে,,। আগে কখনো এভাবে আকাশকে দেখিনি,,।
হঠাৎই বিথী বলে উঠলো,, ও যোদ্ধা বলো কি যেন বলবে বলে ডেকেছিলে,,।
বললাম - আমার মনেহয়,, যেটা বলতে চাই তা আর বলার অপেক্ষা রাখেনা,, তুমি আগে থেকেই সব যেনে গেছো,,।
বিথী - হাঁ যানি,,
বললাম - কি যানো,,?
বিথী - এইযে সামনেই ফুচকাওয়ালা,, ঝালমুড়ি ওয়ালারা দোকান দিয়েছে,,। তোমার খুব ইচ্ছে করছে আমাকে মন ভরে খাওয়াতে,,। কিন্তু তোমার পকেট একেবারে গড়েরমাঠ,, খাওয়াতে পারছোনা তাই মনে মনে কষ্ট পাচ্ছ,,।
আমি এক লাফে উঠে ডাঁড়িয়ে পরলাম,,আর মুখের দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছি - আর ভাবছি,, আরে সত্তি সত্তিই তো আমি এটাই ভাবছিলাম,,।
কৌতুহল আর চাপতে পারালাম না,, বলেই ফেললাম,, এই তুমি কে বলতো,,?
খুব সহজ ভাবেই উত্তর দিল - তোমার প্রেমীকা,,।
হাতটা ধরে এক ঝটকায় আবার পাসে বসিয়ে দিল,,।
আর বলল - যা বলি মন দিয়ে শোনো,,
প্রশ্ন করলো - যানো আমাদের প্রেমের মেয়াদ কতদিনের,,?
আমি - না যানিনা,,
বিথী - মাত্র এক দিনের,,।
তুমি কি যানো আমার প্রেমীকের সংখা কত,,?
আমি - না যানিনা,,
বিথী - তোমাকে নিয়ে 210 জন,,
তুমি কি যানো,, কেন আমি এক দিনের বেশি সম্পর্ক রাখিনা,,?
আমি - না,,
বিথী - কারন, একটা যোদ্ধা তৈরী করতে আমার কাছে এক দিনই যথেষ্ট,,। এবার বল আমার বীর যোদ্ধা,, তুমি কি যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত,,?
কথাগুলো শুনে আমার যেন দম আটকে গিয়েছিলো,, যেন অন্য কনো জগৎএ বিচরণ করছিলাম,,।আমার কাঁধ দুটো ধরে ঝাঁকিয়ে দিয়ে বলল,,- শুনছো আমার কথা ? তুমি কি প্রস্তুত,,?
আমি - হাঁ আমি অনেক আগেই প্রস্তুত,,।
দুহাতে আমার গাল দুটো ধরে বলল চোখ বন্ধকরো,, করলাম - ঠোঁটে চুম্বনের পরশ পেলাম,,।
সারা শরির মনে এক ঐশ্বরিক অনুভুতির স্বাদ পেলাম,, সেটা ভাষায় বর্ণনা করতে পারবোনা,,।
তখন সন্ধ্যা হয়ে এসেছে,,। বিথী আমার দিকে দুহাত বারিয়ে বলল,, - তুমি চাইলে আমাকে আলিঙ্গন দিতে পারো,,। আমি আশে পাশে দেখলাম,, অনেক মানুষের ভীড়,।
বিথী - আমি কাউকে তোয়াক্কা করিনা,,
আমি মাথা নেরে না বলে দিলাম,,।
এবার আরো কাছে ঘেঁসে বসলো,, শরিরের আধখানা অংশ আমাকে ছুঁয়ে আছে,,। শান্ত গলায় -
আবার প্রশ্ন - যানো যোদ্ধা আমার আয়ু আর কত দিন,,?
এবার আমি ভালকরে মুখের দিকে তাকালাম,,
নিয়ন আলোয় চোখের কোনে জল চিকচিক করছে,, আর মাত্র 119 দিন,, আমি ক্যান্সারে আক্রান্ত,,। যোদ্ধা আমি মরতে চাই না,, আমি বাঁচতে চাই,,
আমার দিন একটা একটা ফুরিয়ে আসছে,,
আমার ভেতরটা আমার অজান্তেই কেঁদে উঠলো,, চোখের জলকে আর আটকে রাখতে পারালাম না,,।
বিথী - কি হল যোদ্ধা,,? তোমার চোখে জল,,? তুমি না আমার বীর যোদ্ধা,, আর বীরের চোখে জল শোভা পায়না,,।
আমি বললাম - নিজের জন্য নয়,, তোমার কথা ভেবেই কাঁদছি,, তোমার যে মহৎ উদ্দেশ্য, তার কথা ভেবে কাঁদছি,, এখন আমি বুঝতে পারছি তোমার এই একদিনের ভালবাসায় একটা মানুষ একশো বছর পর্যন্ত বাঁচার শক্তি ফিরে পাবে,,। তোমার অবর্ত্তমানে যারা তোমার এই ভালবাসা থেকে বঞ্চিত হবে,, তাদের কথা ভেবে কাঁদছি,,।
এবার বিথীও কেঁদে ফেলল,,
বলল - বাহঃ আমার যোদ্ধা এবার পুরো পুরি তৈরী,, যোদ্ধা কয়েকটা জরুরী কথা,,- আমি আর কোনোদিন তোমার সঙ্গে দেখা করবোনা,,প্রয়জনে আমি তোমাকে ডেকে নেব,,।
ফেসবুকে আমার উপস্থিতি দেখেও কখনো sms করবেনা,,
আমার নামের পাশে ঐ সবুজ বাতিটা যতদিন দেখতে পাবে,,যানবে ততদিন আমিও আছি,,
তোমার সাথেই আছি,,
কখনো যদি আমার জন্য মনটা কেঁদে ওঠে,, এই সময়,, এইখানে,, এইই বেঞ্চে এসে বসো,,। আর আবিরে রাঙানো ডুবে যাওয়া ঐ সুর্য্যটাকে দেখো,,।
একটা দির্ঘশ্বাস ছেরে বলল,,যোদ্ধা এবার আমাকে উঠতে হবে,,আমার অনেক কাজ আর হাতে সময় খুবই কম, তুমি অনুমতি দাও,,,,,,,,
আমি বললাম - তোমায় বেঁধে রাখার কনো ক্ষমতাই আমার নেই,,। তুমি যাও আবার নতুন কনো যোদ্ধার খোঁজে,,।
আমার কাঁধটা আলতোভাবে ঝাঁকিয়ে চলেগেল,,।
বিথী হারিয়ে গেল মানুষের ভীড়ে,,
আমি বিথীতে মহিত হয়ে গেলাম,, আমি যেন আর আমার মধ্যে নেই,,সম্পুর্ন এক অন্য মানুষ,,।
পরেরদিন সকালে একটা ম্যাসেজ পেলাম - কোলকাতার এক অনামী পাখা কারখানায় প্রডাকশন ম্যানেজারের পদের চাকরীর জন্য,,
আর, চাকরীটা পেতে কনো অসুবিধে হয়নি,,।
ছোট্ট কারখানা,, মালিকের অবর্ত্তমানে আমাকেই সব কিছু দেখতে হয়,,। জীবনটা আগের মতই আবার স্বাভাবিক হয়ে গেল,,।
রোজ রাতে ফেসবুক খুলে বিথীর উপস্থিতি লক্ষ করি,,জ্বলজ্বল করছে সবুজ আলোটা,, বিথী এখনো অনলাইন আছে,,। অনেক ম্যাসেজ আসে,, কনো ম্যাসেজই আর পরতে ইচ্ছা করেনা,, অনেক ম্যাসেজের ভীড়ে প্রীয়ারও ম্যাসেজ আসে,,আর দেখিনা,,সুধু সবুজ আলো ছাড়া,,।
যানি এটাও একদিন হঠাৎই নিভে যাবে,, আর জ্বলবেনা,,।
এমনি একদিন তাকিয়ে আছি সবুজ আলোটার দিকে,,হঠাৎই ম্যাসেজ এলো বিথী শর্মার প্রোফাইল থেকে,, বুকটা ছ্যাঁত করে ঊঠলো,, তাতে লেখা,,,-
যোদ্ধা,, যদি শেষ দেখাটা দেখতে চাও, তারাতারি চলে এসো,, সময় খুবই কম,,।
নিচে পাটনা'র একটা ঠিকানা দেওয়া,,।
তখন অনেক রাত - ভোর হতেই বেরিয়ে পরলাম একরাশ উৎকন্ঠা নিয়ে,,।
ঠিকানায় পৌঁছতে কনো অসুবিধে হয়নি,,।
কলকাতায় বড়বাজারে মামার কাছে থাকতো,, এটা নিজের বারি,, অনেক পুরানো আমলের বারি,, চারিদিক ঘেরা,, মাঝে বিশাল বড় দালান,, বাইরে ভিতরে প্রচুর মানুষের ভীর,, সবার চোখেই জল,,
কোথায় বিথী,, মনটা উৎকন্ঠায় ছটফট করছে,,
ভীড় ঠেলে ভিতরের দিকে যাচ্ছি,, হঠাৎ কেউ আমার হাতটা ধরে ফেললো,, দেখি জল ভরা চোখে আমার মালিক,,
ভীড় কাটিয়ে আমাকে নিয়ে গেল বিথীর কাছে,,
দালানের একপ্রান্তে পালঙ্কের উপরে রানীর মত সুয়ে আছে বিথী,, বড় বড় চোখের কোনে কালি,, শুকনো মুখ,,বিছানার সঙ্গে প্রায় মিশেই গেছে,,
কিন্তু ঠোঁটের কোনে সেই অম্লান হাঁসি এখনো বর্ত্তমান,,
বিথী বলল - আমার পাসে বসো,,
আমি বসলাম,, আমার হাতটা নিয়ে একটা চুমু দিয়ে বলল,, যানো যোদ্ধা আমি তোমায় রোজ দেখতাম তুমি তাকিয়ে আছো আমার প্রফাইলের ঐ সবুজ বাতিটার দিকে,, আজ থেকে ওটা আর জ্বলবেনা,,
আমি কথা দিয়েছিলাম বেইমানী করবোনা,,, দেখো -
আমার শেষ দিনেও তোমাকে আমার ভালবাসা দিতে পেরেছি,, আমি আবার আসবো তোমাদের মাঝে,, আবার আমি যোদ্ধা রুপে তোমাদের পাসে পাবো,,।
আর এইযে এখানে এতো মানুষ দেখছো,, এদের মধ্যে অনেকেই তোমার মত বীর যোদ্ধা,,
আজ আমার একটুও কান্না পেলনা,, কারন -
বিথী কথা দিয়েছে আবার আসবে,,
বিথী বলল এবার তুমি যাও,,আর এক যোদ্ধা এসেছে শেষ দেখা করতে,,
আমি আর পেছন ফিরে তাকাইনি,, আমি চলে যাওয়া সইতে পারিনা,,।
এখনো আমি প্রতি রাতে একবার করে দেখি -
বিথীর প্রোফাইলটা
যদি একবার জ্বলে ওঠে সবুজ বাতিটা,,,,,,,,,"