Monday, 6 February 2017

আদিঅনন্ত



 

আদিঅনন্ত

হঠাৎ ই "আদি" এর আলসেমি ঘুমটা ভাঙিয়ে দিলো
হতচ্ছাড়া ফোনের গ্যাঁ গ্যাঁ করতে থাকা ভাইব্রেশন টা।
আদি চোখ টা ঘুলেই দেখলো হোটাস অ্যাপ এ একটা
আননোন নাম্বার এ পিং “ ওই সয়তান এখনও ঘুমোচ্ছিস?
পুরানো অভ্যেস যায়নি বুঝি।
ডিপি টাতে একটা বেড়ালছানা।
আদির আর বুঝতে দেরী রইলো না এটা কে সেই "অন্তরা"
আজ দুবছর পরেও কথার ভাজ টা যেনো মনে হলো
কাল রাতেই মনে হয় শেষ কথা হয়েছে,
মাঝখানে এতো বড়ো গ্যাপ সেটা যেনো কিছুই না।
আদিও উত্তর করলো -- তুই ও তো সেই একই আছিস,
তোর শয়তান বলাটা একইরকম রয়ে গেছে,
তোর সেই বিড়াল ছানা ( তোর ভাষায় পুষি)
এসব এর প্রতি ভালোবাসা আজও একইরকম।
তা কেমন করে ঘুমের ওভ্যাস পাল্টাতে পারি বল পাগলি!
সঙ্গে সঙ্গে ব্লু টিক দেখতে পেলো আদি, একটা smiley এলো,
আবার টাইপিং.... ম্যাসেজ এল...
তুই তো সেই আগের মতে পাগলি বলে ডাকলি।  
আদিও লিখে ফেললো চটপট--পাগলি কে কি আর ভালো বলা যায় ??  
ওপাশ থেকে উত্তর এলো--তা উঠলি নাকি; এখনও ল্যাদ খাচ্ছিস -??
এপাশ থেকে সেন্ড হলো--না রে তুই জানিস - আমার প্রিয় খাদ্য "ল্যাদ"...
আবার ব্লু টিক দেখতে পেলো আদি,  তারপর আবার টাইপিং  ::: হুমমম।
আদির টাইপ করলো--কেমন আছিস--তারপর ভাবলো এটা বোকাবোকা;
নিশ্চই ভালো আছে নাহলে বকবক করতো না,
সুতরাং ওটা মুছে ফেলে লিখলো-- তা তুই কি করছিস -??
ওপাশ থেকে রিপ্লাই এলো--এই স্নান সেরে কফি হাতে
ব্যালকনিতে ব্যস্ত আছি তোর চ্যাটে।
আদি এর উচ্ছাসিত উত্তর গেলো সঙ্গে সঙ্গে—
বাবা কবিত্ব টা তো তোর রয়েই গেছে,  নিশ্চই তোর চুলের প্রতি
ফোটা জল তোর ব্যলকনি এর মেঝে তে টুপটাপ ছন্দে ঝরে পড়ছে,
আর সূর্যের রশ্মিতে চিকচিক করে উঠছে।
ওপাশ থেকে উত্তর এলো--বাবা কতো বুঝিস,
যেনো আমার পাশে দাড়িয়ে আছিস।
এপাশের টাইপিং--আচ্ছা;  নেই নাকি-??
ওপাশ এর ম্যাসেজ--হুম আমার ফোনের পাশে আছিস,
আদিও হাসতে হাসতে লিখতে যাবে ( সে তুই যাই বল আমি তো আছি নাকি)
হঠাৎ করে হাত থেকে ফোনটা পড়ে গেলো,
চোখ টা খুলেই দেখে যে "রিয়া" আদি এর ভাবি "বৌ" এসে ডাকছে—
 আর কতো ঘুমোবে;  আজ না কালীঘাট এ পূজো দিতে যাওয়ার কথা;
আমি চলে এলাম;  কি যে করো না;  কত যে ঘুমাও না...
আরও কত কি না বলছিলো রিয়া,
আদি সেগুলো ভালো করে শুনতে পায়নি।
খানিক বসে থেকে টাওয়াল টা নিয়ে বাথরুম এ চলে যায়।
কুমোটে বশে ব্রাস নিয়ে ভাবতে থাকে আকাশ পাতাল।  
সত্যি তবে স্বপ্নে এসেছিলো অন্তরা নাকি সত্যি—
হাসিমাখা অবাক মুখে আদি মুচকি হেসে
মনে মনেই বিড়বিড় করতে থাকে—
পাগলি রে তুই আমার "ভিনদেশি আকাশের তারা" হলেও
তুই চিরকাল আমার পাগলি আমি জানি;
আর আমিও তোর শয়তান চিরকাল থাকবো,
হয়তো আমিও আকাশের তারা হয়ে তোর পাশে গিয়ে একদিন মিশবো।  
আবার বাথরুম এর দরজায় ঠকঠকানি "আদি" হ্যালো দেরী হচ্ছে আমাদের।
আদিও নিজেকে সামলে নিয়ে বেশ জোর গলায় বললো---
আসছি আসছি হয়ে গেছে....
গাড়ির কাছে wait করো আর ১০ মিনিট এ আসছি...
চলো চলো.....


Sudhu Tor Jonno 

Wednesday, 11 January 2017

Hello

"কেমন আছো বিদিশা ?"
সেই ভরাট গলার পরিচিত ডাক ।
"তোমার ভাই অমরেশএর কাছ থেকে তোমার ফোন নম্বর পেলাম। এই নতুন নম্বরটা তো আমি জানতাম না ।"
"জানার কি আর খুব প্রয়োজন ছিল ?" বিদিশার গলার অভিমান স্পষ্ট ।
"সেদিন গড়িয়াহাটে তোমাকে আর রাজেশকে দেখলাম । বেশ মানিয়েছে তোমাদের দুজনকে ।"
"এটা বলার জন্যই কি ফোনটা করলে ?'
"রাগটা দেখছি এখনো নাকের ডগায় ঝুলিয়ে রেখেছো । একটুও পাল্টাও নি ।
একটু মুটিয়েছো মনে হলো, যোগা ছেড়েছ নাকি ?"

"এখন যে স্কুলে চাকরি করছি সেখান থেকে ফিরে আর যোগার ক্লাস হয়ে ওঠে না ।
তুমি কেমন আছো অন্তিম ? এখনো কবিতা আবৃত্তি করো ? নাকি শুধু সিগারেটের ধোঁয়ায় কাটে জীবন ?"
"আমি রণক্লান্ত বিদিশা, এখন ভীষণ শান্ত । "
"গোপা কেমন আছে ? বিয়েটা করো নি এখনো ?"
"গোপাও তো তোমার মতোই চলে গেল , উদাসীন এলোমেলো জীবনের সঙ্গী কি কেউ হতে চায় । শুধু সিগারেটটা এখনো ছেড়ে যায় নি ।"
"শীতকালে এখনো মাফলার ছাড়াই ঘোরো ?আর বুড়োদের মতো কাশো ?"
"তুমি এখনো বাচ্চাদের মতোই বায়না করো বিদিশা । এখনো ফুচকা খেয়ে ঝালে অস্থির হয়ে চোখের জল মোছো ?
আর তোমার সেই গোলাপি সালোয়ারটা আছে ? যেটা পরলে তোমাকে পরীর মতো লাগতো !!"
"এই অন্তিম জানো তো সেই আমার বান্ধবী পিয়ালীর বিয়ে হয়ে গেল টাটাতে ।
আরে যার হাত দিয়ে তুমি চিঠি পাঠাতে ,মনে পড়েছে ?"
"আচ্ছা বিদিশা গোধূলির মরা রোদে কখনো আর গঙ্গার ধারে গেছো রাজেশের সাথে ? শুনিয়েছে রাজেশ তোমাকে ..."সন্ধ্যারাগে ঝিলিমিলি ঝিলামের স্রোতখানি বাঁকা ।
আঁধারে মলিন হলো যেন খাপে ঢাকা বাঁকা তলোয়ার"।
"না শোনায়নি । আর কারোর গলায় কবিতা শোনার আমার বিন্দু বিসর্গ ইচ্ছে নেই । "
"আমি কি তোমার কাছে প্রতারক থেকে গেলাম বিদিশা ?"
"প্রতারক তো বলিনি ,শুধু তোমার কাব্যের জগতে আমার স্থান সংকুলান হলো । "
রাজেশের সাথে বাড়ি থেকে বিয়ে প্রায় ফাইনাল হয়ে গেছে বিদিশার । বিদিশার মতামত নিয়েই হয়েছে ।
তবুও কেন যে অন্তিমের গলা শুনে ভিতরে জমে থাকা অভিমান গুলোর ঢেউ উঠছে ।
নির্দিষ্ট কোনো কারণ ছিল কি অন্তিম আর বিদিশার সম্পর্কের সমাপ্তির পিছনে !!কোনো সম্পর্ক ভেঙে যাওয়ার জন্য বোধহয় নির্দিষ্ট কোনো কারণের দরকার হয় না ।
ভেঙে যাওয়া সম্পর্কের রেশটা থেকে যায় গভীরতম কোনো প্রকোষ্ঠে ।
ওদের ছোট্ট ছোট্ট দেখা স্বপ্ন গুলো কেমন বালির ঘরের মতোই ভেঙে গেলো । কোথা দিয়ে ঢুকে গেল একটা অবিশ্বাসের কালো দেওয়াল ।
"আর ডায়রি লেখো বিদিশা ?
সেখানে অন্তিম নামটা আর স্থান পায় ?"
"তোমার শরীরের দিকে খেয়াল রেখো ।টন্সিলএর প্রবলেমটা তো শীত এলেই বাড়ে অন্তিম ,মাফলার নিও।"
"কখনো ইচ্ছে হলে এই নম্বরে ফোন করো ।সেই তোমার আর আমার পোস্ট পেইড সিম দুটোর কথা মনে আছে বিদিশা ? সারাদিন কথা বলতাম আমরা ....."
"মনে আছে অন্তিম ,তুমি বলতে আমাদের কথার চোটে কোম্পানি ডকে উঠে যাবে । "
"আজ রাখি বিদিশা, ভালো থেকো । "
"আমি তো ভীষণ ভালো আছি অন্তিম । "
গলাটা ধরে এলো বিদিশার ।চেনা নিঃশ্বাসের আওয়াজটা আবার কানের ভিতর দিয়ে পুরোনো ক্ষতগুলোতে রক্তপাত ঘটালো ।
সত্যিই কি কারণ থাকে সম্পর্কের ভাঙ্গনের ?শুধু ফাটলটা যখন গভীর হয়ে যায় তখন বোঝাযায় একদিন খুব কাছে থাকা মানুষদুটোর দূরত্ব এখন এক আলোকবর্ষ ।ফেরার ইচ্ছে প্রবল কিন্তু ব্যাবধান ডিঙানোর ক্ষমতা আর দুজনেরই নেই ।
কেটে যাবে বহু দিন বহু মাস, হঠাৎ স্মৃতির পাতায় দেখা দেবে একটা ধূসর মুখের ছবি । ঠোঁটের ফাঁকে একটু করুন হাসির ছোঁয়া দেখা দিয়েই মিলিয়ে যাবে । মনের কোনো একটা ফাঁকা অলিন্দে একটু আন্দোলন উঠেই থেমে যাবে বাস্তবের যান্ত্রিক চাপে ।
সমাপ্ত। বি: দ্র: ( নাম গুলো কাল্পনিক)